পুঁচকে বলে পুঁচকে? একদম এইটুকুনটি। কোলের ছেলে অস্কার। তা বাপ-মায়ের আর দোষ কি? ছেলের চাঁদপানা মুখটি দেখে বাবা বলে বসলেন ছেলে আমার বড় হয়ে অমুক হবে। ব্যাস। ক্ষুদে ছেলে গোঁসা করে ঠিক করল আর বড় হবে না। তা একটু গোঁয়ার হয় বটে জার্মানরা। তাও আবার যেমন তেমন শহরের জার্মান নাকি? এ হলো ডানৎসিগ (Danzig)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির থেকে ছেঁটে নিয়ে যে শহরকে স্বাধীন বলে ঘোষনা করেছিল মিত্রপক্ষ সেই ডানৎসিগ। অস্কার আর বড় হয়নি। ওই তিন বছরেই আটকেছিলো। তিন বছরের জন্মদিনে বাবার দেওয়া একখানা টিনের ড্রাম পিটে পিটে তার যত ডানপিটেমো। টিন-ড্রাম উপন্যাসটি লিখেছেন গুন্টার গ্রাস। ছবিও হয়েছে এই উপন্যাস নিয়ে। অস্কারের মত গুন্টার গ্রাসের জন্মও ওই ডানৎসিগ শহরে।
ছবি এঁকেছেন, লিখেছেন, মূর্তি গড়েছেন। আরো কত কি যে করেছেন!! সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন ১৯৯৯ সালে। ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রচুর। শান্তি আন্দোলনের দূত হয়ে ভ্রমন করেছেন একের পর এক দেশ। ১৯৮৬ সাল। গায়ে সাদা ফতুয়া, পরনে নীল-সাদা চেক কাটা লুঙ্গি। মুখে বিড়ি। গ্রাস বাবু হেঁটে চলেছেন কলকাতার রাস্তায়। এ শহরে কাটিয়ে গেছেন বেশ কিছুদিন। কালীঠাকুর তাঁকে বড়ই আশ্চর্্য্য করেছিলো। ওই জিভ কাটা মূর্তি নিয়ে পরে লেখালিখি করেছেন গ্রাস বাবু। কলকাতায় তাঁর বেশ আপন আপন লাগত।
একটু বাঁয়ে হেলেই থাকতেন। যদিও সাদা কে সাদা, কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করেননি কখনো। ইরান, ইজরায়েল, আমেরিকাই হোক, বা হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত ট্যাঙ্ক, তাঁর কলমের গ্রাসে সব্বাই পড়েছে। দুই জার্মানি এক হওয়াও তাঁর মনঃপুত হয়নি। বলেছিলেন দুজনের আলাদা রাজনৈতিক অস্তিত্ব থাক, নইলে একজন অন্যজন কে গিলে খাবে। আলাদা স্বতন্ত্র সত্বায় বিশ্বাস করতেন, কিন্তু কাঁটাতারে কখনো বিশ্বাস করেন নি। চাইতেন সারা বিশ্বের সব জাতের মানুষ এসে জার্মানিতে থাকুক। মেলামেশা হোক, নতুন মানব সমাজ গড়ে উঠুক। জীবনের প্রথম দিকে নাৎসি ওয়াফেন এসএসের সৈনিক ছিলেন। ১০ নম্বর ট্যাঙ্ক ডিভিশানে থেকে বিশ্বযুদ্ধ শেষ করেন। সে কথা লুকোন নি। কিন্তু পরবর্তিকালে ভিলি ব্রান্ডটের সোসাল ডেমোক্রাসির একনিষ্ট সমর্থক। তা সত্বেও তিনি যেন ছিলেন আধুনিক জার্মানির বিবেক।
ঝুঁপো-গুঁফো হুঁকোমুখো দেখতে বটে সাহেব কে, কিন্তু রসবোধটি মোক্ষম। জীবনের শেষ দিকে এসে, আত্মজীবনী লেখায় হাত দিলেন যখন, সে লেখার নাম দিলেন – বাইম হাউটেন ডার ৎসুইগেল, মানে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানো। ভেবে দেখুন। ঝাঁঝে চোখে জল আসবে। রান্নার সময় সে খোশার খোশবাইতে পাড়া মাত হয়ে যাবে। আপনি একের পর এক ছাড়িয়েই যাবেন। কিন্তু ভেতরে? স্রেফ ফক্কা।
মানুষটা চলে গেলেন গতকাল। ৮৭ বছর বয়সে। পেঁয়াজ রেখেই গেছেন। পড়ে দেখতে পারেন। গোগ্রাসে।
** ছবি ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত