নেইল পলিশ রিমুভারে সতর্কতা |
রং-বেরঙের নেইল পলিশ দিয়ে বেশ তো নখ রাঙাচ্ছেন! কখনো পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে, কখনও-বা ইচ্ছেমতো তুলির আঁচড়ে সেজে উঠছে নখ। রোজ তো আর এক পোশাকে বাইরে যাওয়া যায় না। তাই পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় নখের সাজও। ইন্টারনেট বলছে চীন দেশ থেকেই উদ্ভাবন হয়েছিল এই নখ রাঙানোর চল। এই যে একটার পর একটা রং দিয়ে নখের ক্যানভাসে নকশা করা, সেটার জন্য তো আগে নখটা পরিষ্কার থাকা চাই। নখে নেইল পলিশ দেওয়ার আগে তাই নখটা একেবারে সাদা করে নিতে হয়। একটা রং তুলে তারপর নতুন রং দেওয়ার জন্য ব্যবহার হয় নেইল পলিশ রিমুভার। নিয়মিত রিমুভার ব্যবহারে নখের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না তো?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেশিমাত্রায় রিমুভার ব্যবহারের কারণে আমাদের নখের এনামেলের পাশাপাশি চামড়ায়ও ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। নেইল পেইন্ট রিমুভারগুলোতে সাধারণত অ্যাসিটোন নামের একধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে। এ ছাড়া রিমুভার তৈরিতে অনেক সময় ইথাইল অ্যাসিটেট ব্যবহার করা হয়। তবে অ্যাসিটোনোর চাইতে ইথাইল অ্যাসিটেট কম সংবেদনশীল হওয়ায় ইথাইল অ্যাসিটেট দিয়ে তৈরি রিমুভার ব্যবহার করা ভালো। তাই রিমুভার কেনার সময় উপাদানের দিকেও খেয়াল করা উচিত।
বেশি বেশি রিমুভার ব্যবহার করলে আমাদের নখ ও চামড়ায় কী কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, সে সম্পর্কে বললেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল ওয়াহাব। তিনি জানালেন, মাত্রাতিরিক্ত নেইল পলিশ ও নেইল পলিশ রিমুভার ব্যবহারের কারণে নখের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে নখের এনামেল, যার প্রভাবে পাতলা হয়ে যেতে পারে হাত-পায়ের নখ। পাশাপাশি নখের পাশের ত্বকে প্রদাহজনিত রোগ ‘প্যারোনিকিয়া’ হতে পারে। ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক ও শক্ত। অনেক সময় হাত-পায়ের চামড়া উঠতে পারে।
বারবার রিমুভার ও নেইল পলিশ দেওয়ায় হারায় স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। কেননা, রিমুভারে ময়েশ্চারাইজিং উপাদান হিসেবে যা থাকে, সেটা নখের স্বাভাবিক মসৃণতা বা উজ্জ্বলতা, কোনোটাই ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়।
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বললেন, ‘নখের শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে হলে প্রতিবার রিমুভার ব্যবহারের পরে অবশ্যই কুসুম গরম পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে ভালোভাবে হাত-পা ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো চামড়া থেকে দূর হয়ে যাবে। ভালো করে হাত-পা পরিষ্কার করার পর পেট্রোলিয়াম জেলি, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) বা জলপাইয়ের তেল লাগাতে পারেন। ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন কোনো ভালো ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগাতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ময়েশ্চারাইজিং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।’
নেইল পলিশ রিমুভারের ব্যবহার নিয়ে আফরোজা পারভীনের পরামর্শ হলো:
* মাসে দুবারের বেশি রিমুভার ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি বেশি প্রয়োজন পড়ে সেটা যেন ছয়বারের বেশি না হয়।
* একই ব্র্যান্ডের নেইল পলিশ ও রিমুভার ব্যবহার করতে পারলে খুবই ভালো হয়।
* যত ভালো ব্র্যান্ডই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা প্রতি তিন মাস অন্তর পরিবর্তন করতে হবে। এতে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে।
* রিমুভার লাগিয়ে কটন-বাড বা কটন-বলের সাহায্যে খুবই আলতো করে ঘষে নেইল পলিশ তুলতে হবে।
* সতর্কতার সঙ্গে যে বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে, তা হলো রিমুভার ব্যবহারের সময় যেন তা নখের পাশের চামড়ায় না লাগে।