সে এক দিন ছেল। ট্রেনে করে দুর্গাপুর যেতুম। লোক্যালে লোক্যালে। হাওড়া বর্ধমান কর্ড লাইন ধরে দুনিয়ার আলবাল স্টেশন পেরিয়ে বর্ধমান। মেন লাইন হলে আধ ঘন্টা টাইম বেশী লাগত। সেখান থেকে পুরুলিয়া প্যাসেঞ্জার বা অমন কিছু একটা ধরে দুর্গাপুর। এর বেশী বিশেষ যাতায়াত হত না। পুরো রাস্তা জুড়ে আলট্রা প্রোলেতারিয়েত টাইপ কিছু পাবলিক, কিছু ডেইলি প্যাসেঞ্জার, কিছু হকার এর সাথে সহবাস করতে করতে। ভর দুপুরের ট্রেন আপন মনে ঘুচ ঘুচ করে চলত। দরজার কাছে কোন এক ক্ষ্যাপাচোদা টাইপ পাবলিক বসে ময়লা একটা লুঙ্গী বিপদসীমার উপরে তুলে ঘচর ঘচর করে বিচি ফিচি চুলকাতো। আর আমিও বেশ, দেখি দাদা, একটু সাইডে চেপে বসুন, গাঁড়টা ঠেকাই বলে টলে তিনটে সীটের চতুর্থ পাবলিক হয়ে পৌঁছে যেতাম।
ঝামেলাটা হল চাকরী পাবার পর। বেশ বুঝতে পারলাম, ন্যাহ বাঁড়া, পোষাচ্ছে না। বেশ কয়েকশো টাকা বেশী দিলে ঠান্ডা ঠান্ডা একটা কামরা পাওয়া যায়। তাতে হাই ব্লাড প্রেসারে ভোগা কিছু মাল চড়ে। হেব্বি চাম্পি টাইপ কিছু মামণি, উফফ, কি পেটি পাগলা। আর ট্রেনে উঠেই ল্যাপটপ খুলে একটা এক্সেল শীট নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বসে থাকা বেশ কয়েকটা লোক। হেব্বি বিজি। এদের সাথে যাওয়াটা বেশ ভালো। বেশ কমফোর্টেবল ও। এখানে ভিখিরি নেই, হকার নেই, বাথরুমে হিসির গন্ধ নেই। বড়লোকদের হিসিতে গন্ধ থাকে না।
তা দেড় দশক কেটে গেল, নন এসি কামরা দেখলে কেমন যেন লাগে। লোক্যাল ট্রেনে চড়তে হবে ভাবলে ট্যাক্সিতে করে যাওয়া যায় কিনা চিন্তা আসে।
খলনায়ক দেখতে গেছিলাম, ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো, অশোকাতে। র্যান্ডাম ক্যালাকেলি করেছিলাম ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর। হল এর গেট খুলতে দেরী হলে, কি রে খানকীর ছেলে, কতক্ষণ দাঁড়াবো বাঁড়া আর বলে চেল্লানো। এ ছাড়া প্রদীপ বা ভবানীতে গিয়ে মাঝে মধ্যে প্যায়াসী চুড়েইল বা জওয়ানি কি চুলকানি টাইপ ব্যাপার স্যাপার দেখে, হলের আলো আঁধারিতে প্যান্টের চেনটা আলতো করে নামিয়ে.....মানে যা যা হয় আর কি।
তারপর হটাত করেই উপলব্ধি, কিছু টাকা বেশী নেয় বটে, কিন্তু কেমন যেন মায়াবী জগত। ছোট্ট ছোট্ট হল, হেলানো সীট। সিটি ফিটি দেয় না তেমন কেউ। কুড়ি টাকার ভুট্টার খই দুশো টাকায় বেচে বটে, কিন্তু কি সুন্দর ইংরাজি বলে। ইয়োর অর্ডার স্যার, চিজি পপকর্ণ উইদ এক্সট্রা স্পাইস, টু হান্ড্রেড থার্টি, থ্যানক ইউ স্যার। শুনে কান জুড়িয়ে যায়। ও হ্যাঁ, ছোট প্লাস্টিকের গ্লাসে জল ও পাওয়া যায়। একদম ফ্রী। কোন শালা যায় ওই হলে, যেখানে পাশের সীটের লোকটার গা থেকে কেমন ছারপোকার মত গন্ধ ছাড়ছে।
ফাইন ডাইন দু হাজারেও হয় না আর। সেই নিভু নিভু রেস্তোরাঁ তে ওয়েটারকে যখন শ কিংবা দুশো টিপস দি, অথবা পঁচাশি টাকার বীয়র দুশো টাকায় কিনে আলতো চুমুক মারি, অথবা আড়াই তিন হাজারী পেমেন্ট স্লিপে খচাখচ সাইন মারি, মাইরী বলছি, সেই এস এন ব্যানার্জী রোডের ভাতের হোটেল আর আনোয়ার দার কথা মনে পড়ে না। অবিশ্বাস্য লাগবে, যদি আমার পাশের সোফাতে আনোয়ার দা কে গ্রীলড স্যামন এ ছুরি চালাতে দেখি। অবচেতন মন মানতে চাইবে না। সিসিডি তে প্রেমিকার সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে থাকার সময় আমি চাইবো না, আমার পাশে গুড়কের দোকানে ধারে চা বিড়ি খাওয়া রঞ্জু এসে বসুক। মানতেই পারবো না।
পয়সা দেকাচ্চো বাঁড়া? এলিটিজম? গাঁড়ে মোক্যাম্বো গুঁজে দেবো বাল।