Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

টেনিদার জঙ্গিদমন ~ আশিস দাস

চাটুজ্জদের রোয়াকে আমরা তিন জন বসেছিলাম। পাঠানকোটে জঙ্গিহামলা নিয়ে জোর তর্ক হচ্ছিল। হঠাৎ পিঠে জোর চাপড় খেয়ে চমকে তাকিয়ে দেখি স্বয়ং টেনিদা দাঁড়িয়ে। রোয়াকে পা ছড়িয়ে বসেই বললো, "খুব জঙ্গি নিয়ে ভাটাচ্ছিস দেখছি? নিজেদের কি অর্ণব গোস্বামী ভেবেছিস? যুদ্ধের আর আসল জঙ্গিদের খবর পেতে চাইলে আমাকে বল।"
হাবুল সেন বলে উঠল, "তুমি তো ক্যামোফ্লেজ কইর‍্যা জাপানি মারছিলা, জঙ্গির খবর তোমার কাছে আসে ক্যামনে শুনি সেডা?"
টেনিদা বলে, "হু হু বাওয়া আমি পাগল না মদন মিত্র? এসব সিক্রেট খবর অমনি অমনি হয়? যা প্যালা মোড়ের মাথার কেএফসি থেকে একটা জেঙ্গার বার্গার নিয়ে আয় দেখি।"
আমি জানতাম, সকালে উঠেই আনন্দবাজারে প্রথম পাতায় দিদির মুখ দেখা মানেই দিনটা অশুভ। কি আর করা, গচ্চা গেল ১৫০ টাকা।
বার্গারে মস্ত একটা কামড় দিয়ে টেনিদা শুরু করল, "জানিস তো আমার ছাতি ৫৬ ইঞ্চি-"
বেরসিক ক্যাবলাটা সাথে সাথে বলে কিনা, "ডাহা মিথ্যে, এই তো সেদিন পাড়ার নাটকে ড্রেস বানানোর সময় ৪২ মাপল দেখলাম"।
টেনিদা উদুম ক্ষেপে গিয়ে বললো, "শাট আপ ক্যাবলা, আর একবার বাজে বকবক করলে এক ঘুষিতে তোর নাক-"
"নাগপুরে চলে যাবে", কমপ্লিট করলাম আমি।
হাবুল সেন জুড়ে দিল, "আর মোহন ভাগবত সেডা লইয়্যা লোফ্যালুফি খেলবে। তুমি থাইম্যো না টেনিদা, ক্যাবলাডা পোলাপান। রামদেবের মত ইগনোর কর ওডাকে।"
নাকমুখ কুঁচকে টেনিদা বলল, "আর বেশি বকলে জলপান করে ফেলব একদম। সব ব্যাপারে চেতন ভগতের মত ফোড়ন কাটা বেরিয়ে যাবে তখন। যাই হোক ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে তখন আর্মিতে পোস্টেড আমি। তখন তো যা দিন গেছে, উঠতে জঙ্গি মারছি, বসতে জঙ্গি মারছি, ফেসবুকেও জঙ্গি মারছি-"
"ফেসবুকে? সে আবার কেমন?" - আমি আর থাকতে না পেরে বললাম।
টেনিদা ফিচকে হেসে বললো," আরে মেয়েদের ফেক প্রোফাইল বানিয়ে জঙ্গিগুলোকে রিকোয়েস্ট পাঠাতাম, ব্যাটারা ফ্রেন্ড হয়ে চ্যাট শুরু করত। কিছুদিন বাদেই হ্যাপি নিউ ইয়ার, কিক, চাঁদের পাহাড় এসব সিনেমার ডাউনলোড লিঙ্ক পাঠাতাম। ব্যাস আর যায় কোথা, ব্যাটারা নিজেরাই সুইসাইড করে মরতো।"
ক্যাবলা বললো," বেড়ে বুদ্ধি তো"।
টেনিদা হেভি খুশি হয়ে বললো,"হু হু বাওয়া, পটলডাঙার টেনি মুখুজ্যের ব্রেন এটা। তারপর শোন। একটা জঙ্গি ঘাঁটি আমাদের পাশের পাহাড়ে অনেকদিন ধরে রয়েছে। ব্যাটারা আমাদের ওয়্যারলেস ট্যাপ করে শোনে সারাদিন আর মাঝে মাঝেই নিচের গ্রামে হামলা চালায়। কর্নেল জবরদস্ত সিং একদিন আমাকে ডেকে বলে, ক্যাপ্টেন টেনি আপহি হামারে ভরোসা হো, কুছ করো আপ। আমি তো বার খেয়ে রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু কি করা যায় বুঝতে পারলাম না। ব্যাটারা রাত জেগে আমাদের ওয়্যারলেস ট্যাপ করে আর পাহারা দেয়। আচমকা হামলাও করা যাবেনা। তার উপর ওদের ডেরা এমন একটা গুহার আড়ালে যে আমাদের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেবে বেশি পাঁয়তাড়া করলে। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে চোখ পড়ল রেডিওটার দিকে। দেখেই চট করে মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। সেই রাতেই ১০ জন সেনাকে নিয়ে আমি হামলা করলাম ওদের ডেরায়। ব্যাস সবাই ডেড। মিশন সাক্সেসফুল যাকে বলে।"
সবাই সমস্বরে বললাম, "কি করে হল? রাত জেগে পাহারা দিত যে ওরা?"
টেনিদা বললো,"ওই যে রেডিও।"
আমি বললাম,"তাতে কি?"
টেনিদা ধ্যানগম্ভীর বুদ্ধের মত হেসে বললো, "আরে রেডিও তে মোদিজির মনকি বাত চালিয়ে ওয়্যারলেসের সামনে লাগিয়ে গেছিলাম। ব্যাটারা ওয়্যারলেস ট্যাপ করে ওই শুনে শুনে বোর হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল তো! পাহারা আর দেবে কে? আমাকে তো পরমবীর চক্র দিয়েই দিত। নেহাত দাদরি হল, তাই ফিরিয়ে দিলাম ওটা দেবার আগেই। বুঝলি?  এ হল সত্যিকার জঙ্গি মারার গল্প।এই এই.. ক্যাবলা ক্যুইক, কোয়ালিটি ওয়ালশের গাড়ি যাচ্ছে একটা"।

ফেসবুকে কমেন্ট দিন

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks