জয়েন্ট পরীক্ষা নিয়ে দুদলের অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি।
এক দল বলছে আল আমীন থেকে ৪৫০ জন পেয়েছে মানেই কিছু একটা কারচুপি হয়েছে। এদের মানসিকতা হলো যে মুসলমানরা লেখাপড়া করতে পারে না, লেখাপড়া তো শুধুই বর্ণহিন্দুদের জাগিরদারি। যখন রহড়া বা নরেন্দ্রপুর থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ ডাক্তারি অথবা সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পেতো এদের কোনো সন্দেহ হয়নি, যখন সেন্ট জেমস বা সাউথ পয়েন্টের একই ক্লাস থেকে ১৫-১৬ জন আইআইটি পায় এদের কোনো সন্দেহ হয়না, যখন রাজস্থানের কোটার কোচিং সেন্টার গুলো থেকে ৪০-৫০% ছেলেমেয়ে আইআইটিতে পায় তখন এনাদের কোনো সন্দেহ হয় না। এই রাজ্যের কোচিং সেন্টারগুলো থেকেও গুচ্ছ গুচ্ছ ছেলেমেয়ে ডাক্তারি বা সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পায়, সাকসেস রেট্ খুব ভালো, বিশেষ করে সেইসব ইনস্টিটিউটগুলোর যারা ভর্তি করার সময় পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করে। আল আমীনও তাই করে, ভর্তি করার সময় এন্ট্রান্স পরীক্ষা নেয় এবং সাংঘাতিক পরিশ্রম করায়, তাই সেখান থেকে যে অনেকজন পাবে এতে সন্দেহ কী? তা ছাড়া আল আমীন একটি ইস্কুল না, তাদের ১১ টা সেন্টার থেকে ছাত্র ছাত্রীরা জয়েন্ট দিয়েছিলো।
আবার আরেক দল দেখছি যারা জয়েন্টে কারচুপি হয়েছে বললেই রেগে যাচ্ছে। এদের বক্তব্য হলো আল আমীন ভালো করেছে মানে জয়েন্টে কারচুপি হতে পারে না। এরা আল আমীনকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে জয়েন্টের কারচুপির প্রশ্নটাকেই চেপে দিতে চাইছে! প্রথম দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দলের বিশেষ তফাৎ নেই, প্রথম দলের মনে করে আল আমীন থেকে এত জন পেয়েছে মানেই কারচুপি আর দ্বিতীয় দল মনে করে আল আমীন থেকে এত জন পেয়েছে মানেই কারচুপি না।
এবার জয়েন্টের পরীক্ষায় কারচুপি হয়েছে কিনা সেটা তদন্ত না হলে কেউ বলতে পারবে না তবে সন্দেহের যে যথেষ্ট কারণ আছে এটা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলেই বুঝবেন। রেজাল্ট বেরোনোর সাথে সাথেই বহু মানুষ ফেসবুক এবং অন্যত্র আওয়াজ তুলেছেন, আল আমীন ইত্যাদির কথা তখনও কেউ জানেই না, আমি নিশ্চিত এখনো অধিকাংশ প্রতিবাদকারী পরীক্ষার্থী এবং অভিবাবকরা আল আমীন থেকে কজন পেয়েছে সেটা জানে না, তাই আল আমীন থেকে বেশি জন পেয়েছে বলে তারা প্রতিবাদ করছে এটা ভুল। অনেকগুলো আশ্চর্য্যজনক ঘটনা ঘটেছে যা থেকে বলাই যায় যে এবারের জয়েন্টের রেজাল্ট নজিরবিহীন। যেখানে ২৫০০ আসন সব মিলিয়ে সেখানে এবারে কোয়ালিফাইং নম্বর পেয়েছেন ১২০০০ এর বেশি ছাত্র ছাত্রী, আগেরবারের ৩ গুন্। ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে ৩০০ জন, আগেরবার পেয়েছিলো ১৮ জন। এই সমস্ত হয়েছে আগেরবারের চেয়ে ২০ হাজার কম পরীক্ষার্থী থাকার পরেও। বহু পরীক্ষার্থী ওএমআর শিট দেখতে পাচ্ছে না, কোয়ালিফাইং নম্বরের বেশি পেয়েও কোনো রাংক আসেনি অনেকের, বহু ছাত্রের রেজাল্ট ইনভ্যালিড দেখাচ্ছে। তা ছাড়াও দশ নম্বরের ভুল প্রশ্ন নিয়ে একটা কনফিউশন রয়েছে। ওএমআর শিট না দেখতে পাওয়ার জন্যে এই কনফিউশন কাটছে না। জয়েন্ট পরীক্ষা নিয়ে এতো অভিযোগ আমার স্মৃতিতে নেই। তা ছাড়া ছত্তিসগড়, মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যাতে মেডিক্যাল জয়েন্ট নিয়ে কারচুপি হয়েছে, আমাদের রাজ্যেও টেট পরীক্ষা নিয়ে যে প্রহসন হয়েছে আমরা দেখেছি তাই ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখেছে। কাল আদালতে যাচ্ছে শুনলাম, যদি সত্যি কিছু কারচুপি হয়ে থাকে তাহলে এর বিশাল প্রতিবাদ দরকার, সকলে মিলে।