Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

ইউ.এফ.ও, নোবেল ও টেনিদা ~ আশিস দাস

চাটুজ্যেদের রোয়াকে একলা বসে সামনের ত্রিফলাটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হঠাৎ কেমন একটা ভাব চলে এল। সবে বেশ মেজাজে রঙ দে তু মোহে গেরুয়া গানটা শুরু করতে যাব মাথায় খটাং করে এক গাঁট্টা! "কে বে" বলে চিৎকার করে পিছন ঘুরেই দেখি তিনি। কে আবার? সেই আদি ও অকৃত্রিম টেনি মুখুজ্জে।
রোয়াকে বসে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠল, "এটা গান হচ্ছে? মনে হচ্ছে তো গলায় দুটো কোলাব্যাং ঢুকে হানি সিং এর গানের তালে ডিস্কো নাচছে!"
আমার মাথাটা গেল গরম হয়ে। মনে হল বলি,"এসব সূক্ষ কলার তুমি কি বুঝবে? সারাদিন শোন তো পাগলু আর খোকাবাবু!" তবে কিনা আগের গাঁট্টায় তো পেটের পিলে অব্দি চমকে উঠে এক্সকিউস মি বলে উঠেছিল তাই হালকা চেপে গেলাম।
টেনিদা জিগেস করল, "হাবুল আর ক্যাবলা বাছাধনেরা গেল কই?"
আমি ব্যাজার মুখে বললাম,"দুজনেই বেড়াতে গেছে, তাও আবার বিদেশ। হাবুল নেপাল আর ক্যাবলা সিঙ্গাপুর-ব্যাঙ্কক।"
টেনিদা নাকমুখ কুঁচকে বলল, "সবকটাকে মোদীরোগে ধরল নাকি? যাকগে যাক। তুই তো আছিস, তুই আমার সেরা চ্যালা রে প্যালা।"
আমি খুশি হয়ে বললাম," তাতো বটেই। কিন্তু ওরা কি বিশ্বাসঘাতক ভাবো একবার তুমি!"
টেনিদা ভাবুক মুখ করে বললো,"হ্যাঁ, তাও গেল কোথায়? না নেপাল আর সিঙ্গাপুর। তাও যদি ইকিয়াং টুচিস্কি তে যেত না হয় বুঝতাম।"
গল্পের গন্ধ পেয়ে আমি টেনিদার দিকে সরে বসলাম। নিরীহভাবে বললাম, "সেটা কোথায় গো টেনিদা? চীন না আফ্রিকা?"
কিন্তু টেনিদা তো আর দেশের জনগণ নয় যে নেতা থেকে জুকারবার্গ সবাই বোকা বানিয়ে চলে যাবে! সঙ্গে সঙ্গে বলে, "অত সোজা নয় বাবা প্যালারাম বাঁড়ুজ্জে। ফ্রিতে গপ্প শোনার মতলব? বড় রাস্তার লেবানিজ রোলের দোকানটা থেকে চটপট ঘুরে এস একবার দেখি।"
ব্যাজার মুখে চিকেন র‍্যাপটা নিয়ে ফিরতেই ছোঁ মেরে নিয়ে গপ গপ করে তিন কামড়ে গোটাটা সাবাড় করে দিয়ে হাতটা আমার জিন্সেই মুছে শুরু করল টেনিদা," সেবার যখন নোবেল চুরি গেল রবীন্দ্রনাথের, সিবিআই তো অনেক খুঁজেও কিছুই করতে পারলো না। সবরকম চেষ্টার পর শেষে মুখ্যমন্ত্রী আমায় ডেকে বললেন, 'টেনি, দেখো গত ৩৪ মাস ধরে নোবেল পাওয়া যাচ্ছেনা। এর পিছনে সিপিয়েমের চক্রান্ত আছে আমি জানি, সব সাজানো ঘটনা। কিন্তু প্রমাণ পাচ্ছিনা। তোমাকেই নোবেলটা খুজে আনতে হবে, আমি তোমাকে নোবেলশ্রী উপাধি দেব।'
বার খেয়েই হোক আর কৌতুহলেই হোক আমি রাজী তো হয়ে গেলাম। কিন্তু খুজি কোথায়? ব্যাপারটা ভীষণ পুঁদিচ্চেরি হয়ে উঠছে দেখে একদিন মেট্রো করে ময়দান গেলাম ব্রেনটা ফ্রেশ করে নিতে একটু। তো ময়দানে শুয়ে শুয়ে খুব ভাবছি খুব ভাবছি। রাত হয়ে গেছে আশপাশে কেউ নেই বুঝলি! হঠাৎ দেখি আকাশে চাকতি মতো কি একটা জ্বলজ্বল করছে। প্রথমটায় ভাবলুম হয়তো এই বিশ্ববাংলা টাংলার জন্য ফানুস উড়িয়েছে হয়তো। কিন্তু একটু বাদেই সেটা মাঠে নেমে এল। দেখি সেটা একটা ইউ.এফ.ও-"
আমি খাবি খাওয়া কাতলার মত ঢোঁক গিলে আঁতকে উঠলাম, "কি! ময়দানে ইউ.এফ.ও!!"
দাঁত খিঁচিয়ে টেনিদা চেঁচিয়ে উঠল, "কেন শুনি? ওগুলো কি শুধু নিউ ইয়র্ক আর এল.এ তেই নামতে পারে? বঙ্কুবাবুর বন্ধু পড়িস নি? বাংলায় এত শিল্প আসছে আর একটা এলিয়েন এলেই দোষ?"
আমি মনে মনে ভাবলাম "ঢপ তো এবার স্মৃতি ইরানির লেভেলে যাচ্ছে মাইরি!" কিন্তু টেনিদার চোখে (মোদি প্রধানমন্ত্রী হবার পর আডবানির চোখের মত) হিংস্র আগুন দেখে থেমে গেলাম। বরং বললাম, "হ্যাঁ হ্যাঁ তাতো বটেই। তাছাড়া এলিয়েন তুমি ছাড়া আর কার কাছেই বা আসবে?"
টেনিদা বলল, "লাস্ট ওয়ার্নিং প্যালা। আর একবার কুরুবকের মত বকবক করলে এক চড়ে তোর কান-"
"কানহা রিসার্ভ ফরেস্টে বাঘের মুখে গিয়ে পড়বে", শেষ করলাম আমি।
বদরাগী হলেও টেনিদা গুনের কদর করে। তাই খুশি হয়ে বললো,"এটা বেশ নতুন দিলি তো, আচ্ছা গপ্প শোন। তো ইউ.এফ.ও থেকে কটা লিকলিকে চেহারার পিঁপড়ের মত দেখতে লোক এসে প্রথমে বলে 'ইস্টাকু হুপিয়াকু চিং?' আমি তো বললাম, 'যা বলবে বাংলায় বল বাপু'। তখন কি একটা মাথার নব ঘোরালো আর বলতে শুরু করল, 'মহাশয়, আপনার শুভ নাম কি ভজহরি মুখার্জী?' আমি বললুম, 'হ্যাঁ'। ব্যাস কি একটা লেসার মত তাক করল আমার দিকে আর আমি পুরো ফ্ল্যাট। জ্ঞান আসতে দেখি আমি বন্দি। বাইরে আকাশে দেখা যাচ্ছে কিন্ত কি আশ্চর্য! আকাশের রঙ নীল সাদা ডোরা কাটা! সে যাই হোক খানিকবাদে আমাকে ওরা নিয়ে গেল ওদের রাজার কাছে। সে বললো, 'মহাশয় শুনুন। আমাদিগের গ্রহের নাম ইকিয়াং টুচিস্কি। আমরা অতীব নিরীহ প্রাণী, আমরাও রবীন্দ্রনাথ পড়িয়া থাকি। কয়েক বৎসর পূর্বে আমাদিগের জ্যোতিষী ভবিষ্যৎবাণী করিয়াছিলেন যে আপনাদিগের গ্রহে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ঘোর দুর্দিন আসিতেছে। রাস্তার মোড়ে হিসি করা প্রৌঢ় হইতে গাছের আড়ালে কিসি করা যুগল সকল ব্যক্তিকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিতে বাধ্য করা হইবে। অতএব প্রতিবাদস্বরুপ আমরা নোবেল হরণ করিয়া লইয়া আসি। আপনাকেও আমরা যাইতে দিতে পারিবনা, আপনাকে আজীবন বন্দি থাকিতে হইবে।'
আমি প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলাম। তারপর হঠাৎ মাথায় একটা সাংঘাতিক বুদ্ধি খেলে গেল। আমি বললাম, 'দেখুন স্যার আমি কিন্তু শিল্পী মানুষ, এখানে আমার শিল্পসাধনা করতে পারব তো?' ওরা খুশি মনে সায় দিল। আমিও একটু পর থেকে কাজ শুরু করলাম, একটা হতে না হতেই খেল খতম। চেয়ে দেখি মেঝেতে পড়ে সব ব্যাটা চিঁ চিঁ করছে! কেউ কান চেপে বসে, কেউ মাথার চুল ছিঁড়ছে। ব্যাস আর আমাকে পায় কে। বললুল,'দেখুন স্যার এখানে আমাকে রাখলে কিন্তু এই রকমই চলবে সারাদিন।' ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে সেই রাতেই ব্যাটারা আমাকে ময়দানে নামিয়ে দিয়ে গেল! নোবেলটাও চাইলে দিয়েই দিত, কিন্তু ভাবলাম যা খিল্লি হচ্ছে বুড়োকে নিয়ে ওটা অন্যগ্রহেই থাক।"
আমি কৌতুহল চাপতে না পেরে বলেই ফেললুম, "কিন্তু কি করলে তুমি ওদের?যার এত ক্ষমতা?"
টেনিদা কেজরিওয়ালের মত হালকা হাসি দিয়ে বলল, "আরে বোকা যখন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গেছিলাম তখন উনি ওনার লেখা কবিতার ২টো বই গিফট দিয়েছিলেন তো! সেটারই একটা মুখস্ত করে ঝেড়ে দিয়েছিলাম! হু হু বাওয়া, এ হল টেনি শর্মা! আমার সাথে পাঙ্গা!"

ফেসবুকে কমেন্ট দিন

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks