আজ রাত্রেই মেয়েটি জন্মায়। গোকুলে ও গোপনে। তার মা তখন প্রসব-পীড়ায় অচেতন। কিছুক্ষণ পর যমুনার ওপার থেকে একটি লোক আসে। নিজের সদ্যোজাত ছেলেটিকে গচ্ছিত রেখে চুপিচুপি মেয়েটিকে তুলে নেয়। মায়ের মুখটি ভাল করে দেখার আগেই জন্মের মতো পরিবার-হারা হয় সেই মেয়ে।
মেয়েটিকে পাচার করা হয় মথুরার এক ঘুপচি কারাগারে। ছেলেটির প্রাণ মূল্যবান। তার প্রক্সি হিসেবে মেয়েটিকে রেখে দেওয়া হয়। মথুরার রাজা ছেলেটিকে মারতে এসে মেয়েটিকে পায় ও তাকেই নিয়ে যায়। মেয়েটি দ্বিতীয় বার হাতবদল হয়।
রাজা যখন পাথরের দেওয়ালে আছাড় মারতে যাচ্ছে কয়েক-ঘণ্টা-আগে-জন্মানো পুঁচকে মেয়েটিকে, হাত পিছলে ছিটকে যায় সে। তারপর কোনও এক অজানা ঘটনা-পরম্পরায় তার ঠাঁই হয় দুর্গম বিন্ধ্য পর্বতে। সেখানেই সে বড় হয়।
মেয়েটির মা-বাবার কাছে ছেলেটিও বড় হয়। একটা সময়ে সেই মা-বাবা সত্যিটা জানতে পারে। ছেলেটি মথুরায় আসল মা-বাবার কাছে ফেরৎ যায়। কিন্তু মেয়েটির মা-বাবা ভুলেও হারানো মেয়ের খোঁজ করে না। কী লাভ খুঁজে ? হারানো, চুরি-যাওয়া, বিক্রি-হয়ে-যাওয়া, পাচার-হয়ে-যাওয়া ছেলেদের ঘরে তোলা যায়। মেয়েদের যায় না।
ছেলেটির এখন দু-জোড়া মা-বাবা। তার জীবনে অনেক প্রেম আসে। অনেক স্ত্রী আসে। অনেক সন্তান আসে। আসে রাজত্ব।
মেয়েটির ? কেউ জানে না। তার এক-জোড়া মা-বাবা, একটি প্রেমিক, একটি স্বামী, একটি সন্তান, একটুও ভূমি জুটেছিল কিনা, কেউ খোঁজ রাখেনি।
একটি ছেলে-বাচ্চাকে বাঁচাতে প্রক্সি হয়েছিল সে, এই তার একমাত্র পরিচয়।
শুভ জন্মাষ্টমী। শুধু কৃষ্ণের নয়, আজ যোগমায়ারও জন্মরাত।