আজকাল আর বেশি লেখা লেখি করা হয় না। চর্তুদিকে যা দেখি তাতে আর সময় পাই না। আজ মনে হল কিছু কথা বলা দরকার, আমার কথা , আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে এলাম আজ। এখানে নানা বিষয়ে কথা হয়, তর্ক হয়, সব জানি না বুঝিনা তো কথা বলব কি সাহসে। যাক ধান ভাঙতে শিবের গীত বন্ধ করে সোজা কথায় আসি।
আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকি, আমরা রেশন দোকানে যাই কি ? যদি না যাই তা হলে কষ্ট হলেও কয়েক সপ্তাহ একটু যাই না। লোকসভা ভোটে হারার পর থেকে নানা মুনি নানা ভাবে বামফ্রন্ট সরকার আর সি পি আই এম পার্টির নানা খুত খুঁজেই চলেছেন। কেউ সত্যি কিছু দেখাচ্ছেন, আর বেশির ভাগ ঝাল মেটাচ্ছেন পার্টিটার গুষ্ঠি উদ্ধার করে। এটা আমার মত যাঁরা মানেন না , মাথার দিব্যি দিয়ে মানাতেও চাই না। তাঁরা থাকুন তাদের মত নিয়ে।
জিনিসের দাম এখন আকাশছোঁয়া, নিম্নবিত্ত দূরে থাক মধ্যবিত্তের ও পেটে টান পড়েছে , রোজ যা খেতেন ২ বছর আগে এখন বাজারে গেলে অনেক কিছু ছেঁটে ফেলছেন বা পরিমাণে কমাচ্ছেন তাঁরা। এই বাজার দরের জন্য সরাসরি দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ তা মনে করছেন না। কেন দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার জানেন বোধহয় সকলে তাও এক দুই করে লিখি।
এক নম্বর দেখুন পেট্রোল, ডিজেলের দামের কি অবস্থা, বিদেশের বাজারে অপরিশোধিত তেল এখন ৭৪ ডলার প্রতি ব্যারেল। এক ব্যারেল মানে ১৭৬ লিটার , এক ডলার মানে ৪৮ টাকা, আর অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করতে এক লিটারে খরচা ২২ পয়সা। সব মিলিয়ে দাম পড়ে ২২ টাকার কাছে আর তা বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় সরকার ৫৫ টাকার কাছাকাছি। তেলের দাম বেশি হলে সব জিনিসের দাম বাড়ে , নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের মুখে আর তেলের দাম বাড়ার গল্প নেই , আমাদের আছে তো ?
দ্বিতীয় হল আগাম বাণিজ্য নীতি , বামপন্থীদের চাপে খাদ্যে ওটা চালু ছিল না , তৃণমুল সমর্থিত কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্য দ্রব্যের উপর সেটা চালু করেছে। চিনি , গম, ডাল সব এখন আগাম বাণিজ্যের কবলে। ক্ষেত থেকে ফসল ওঠার আগে চুক্তি হয়ে গেছে , উৎপন্ন খাদ্য চলে যাবে বিদেশি কম্পানির গোডাউনে। আর কি চাই যে দিন চিনি আর, ডাল আগাম বাণিজ্যে ঢুকলো সেদিন থেকে চিনি আর ডালের দাম আকাশছোঁয়া। কাগজ তো লিখবে না কে বলবে এসব সাধারণ মানুষের কাছে আমরা ছাড়া?
তৃতীয় কারণটা আরও মারাত্বক, দিদিমণি তখন এন ডি এ জামানায় মন্ত্রী ছিলেন, তখন থেকে অত্যাবশকীয় পণ্য আইন কে নখ দাঁতহীন করে হল। মজুতদারী করলে কোন শাস্তি নেই, রাজ্য সরকার কিছু করতে পারে না আইন নেই। আলুর ক্ষেত্রে দেখুন কি করুণ হাল রাজ্য সরকারের। দিদিমণির কথা শুনে অনেকে বলেন আলুর দাম বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকার দায়ী কেন্দ্র সরকার কি করবে? আসল কারণ ঃ- ধসা রোগে আলুর ফলন কম, তবু রাজ্যের ৪৫০ টা হিমঘরে যে আলু আছে তাই দিয়ে নতুন আলু ওঠার আগে তিন মাস পশ্চিমবঙ্গে আলুর যা দরকার তা জোটান যেত। কিন্তু অত্যাবশকীয় পণ্য আইন না থাকায় রাজ্য সরকার কে কাঁচকলা দেখিয়ে আলু হিমঘরে রেখে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে দাম বাড়িয়ে রেখেছে হিমঘরের মালিকরা।
এই তিনটে কারণ থেকে যে ব্যবস্থা কিছুটা হলেও মানুষ কে বাঁচাতে পারে তা হল গণবন্টণ ব্যবস্থা, মানে রেশন , কিন্তু সেখানেও কেন্দ্রীয় সরকার বাধা দিয়ে রেখেছে, পারলে রেশন ব্যবস্থাটা তুলে দেয়। এমনিতে বি পি এল ছাড়া কারুর রেশন নেই তার উপর খাদ্য নিরাপত্তা বিল এর নাম করে ওরা বিপিএল নির্ধারণ করার অধিকার নিজেদের হাতে নিতে চাইছে। যেহেতু অর্জুন সেনগুপ্তের রির্পোটে আছে দেশের ৮০ ভাগ মানুষের দৈনিক আয় ২০ টাকার নিচে তাই বিপিএল এর নতুন মাপকাঠি করছে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামে ১১ টাকা আর শহরে ১৮ টাকা আয় যারা করেন তাঁরাই খালি বিপিএল থাকবেন। তার মানে রেশন ব্যবস্থাটা আর কিছু থাকবে না । এর মধ্যে আবার আশিয়ান চুক্তি সই করা হয়ে গেছে ফলে ৩০০০ মাল বিনা শুল্কে আমাদের বাজারে ঢুকবে, কৃষি পন্য আছে তার মধ্যে, ফলে কৃষকের বেঁচে থাকার যে রাস্তা ছিল সেটাও বন্ধ হল। wto এর দোহা রাউন্ড এর নতুন করে সমঝোতার লাইন বার হচ্ছে , আর কি ভর্তুকি দেওয়া যাবে না । কৃষি পণ্যের দাম যা হবে তাতে আর বাজার করে খেতে হবে না। কে বলবে সাধারণ মানুষ কে এই কথাগুলি আনন্দবাজার বা স্টার আনন্দ নিশ্চয়ই নয়। পশ্চিমবঙ্গের ট্রেড ইউনিয়ান গুলি রাস্তায় নামতে শুরু করেছে, ১৬ সেপ্টেম্বার ১০ দফা দাবির প্রথম দাবি মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে। আমরা কি করব? সর্বশক্তি দিয়ে এই নিয়ে প্রচার করব না কি?
আর বামফ্রন্ট সরকার ? এত যার পিন্ডি চটকানো, বন্ধু শত্রু কেউ তো ছেড়ে কথা বলছে না এখন। তারা কি করছে। সীমাবদ্ধ আর্থিক ক্ষমতা নিয়েই রেশন ব্যবস্থাটাকে চালানোর চেষ্টা করছে, চিনি ও ডাল দেবার ব্যবস্থা করেছে, চাল, গম কম দামে দেওয়া চালু ছিল আগে থেকেই। আলুর মজুতদার কে চাপে ফেলার জন্য আইন না থাকয় রেশনের মাধ্যমে পাজ্ঞাব থেকে আলু এনে ১৩ টাকায় পরিবার প্রতি ২ কেজি দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা যারা এখানে তর্ক করি সবাই এপিএল, তাই রেশন দোকানে যাই না, আমাদের মাল টা সরকারের ভরতুকি দেওয়া রেটে রেশন ডিলার কেনে আর খোলা বাজারে বেঁচে দেয়। আমাদের কি কিছুই করার নেই? বামফ্রন্ট সরকারের বিকল্প নীতি প্রচার করা ছাড়া , রেশন দোকানে সাপ্তাহিক মাল কেনার উপস্থিতি দূর্নীতি রুখতে সাহায্য করবে। প্রশ্ন হল যাব কি ? মাল খারাপ, সময় নেই প্রভৃতি নানা কারন থাকবে । ডি ওয়াই এফ আই বা সি পি আই এম একদিন ডেপুটেশান দিলে সমস্যা মিটবে না। আপনারা যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকেন আপনাদের কাছে বিনীত আবেদন মূল্যবৃদ্ধির প্রকৃত কারণ প্রচারের পাশাপাশি একটু বামফ্রন্টের বিকল্প নীতির প্রচার করুন, আর রেশন দোকানে নিয়মিত যান, খোঁজ রাখুন দূর্নীতি থাকলে খবর দিন।
যারা সি পি আই এম এর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনের পর্যালোচনা পড়েছেন দেখবেন ভোটে পরাজয়ের কারণ গুলির মধ্যে রেশন ব্যবস্থার ব্যর্থতা কে একটি অন্যতম কারণ বলে সি পি আই এম মনে করেছে।