Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

একটি রঙিন গল্প ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

গত মঙ্গলবার দুপুর বারোটা সাতচল্লিশে আচমকা আমাকে দলে ডেকে নিল ওরা। আমি কোনও পার্টি করতাম না। তাই দলত্যাগ বা দলবদল জাতীয় মহান শব্দ আমার বেলা উচ্চারণ করা যাবেনা। দলে ভেড়াল বা দলভুক্তি ঘটল বলা যেতে পারে।

চাকরি পাই নি। কলকাতায় সেজপিসির বাড়িতে অনাহুত আশ্রিত। চাকরির পরীক্ষা দিই আর ফাইফরমাশ খাটি। মান্তুকে ইস্কুলবাসে পৌঁছে দেওয়া, দোকান বাজার মায় কাজের দিদি না এলে ইদানীং এমন কী কাপড়কাচা বাসনমাজাও। কী করা? দাদা বৌদি দু'জনেই অফিস যায়। পিসি বাতে শয্যাশায়ী। আমাকে যে থাকতে দিয়েছে এই ঢের। পরিবারটাকে সব মিলিয়ে মহানুভবও বলা যায়। 

কী কথা থেকে কী কথায় চলে এলাম। আসল কাহিনিটা বলি। বেলগাছিয়া থেকে নদু কাকা পিসিকে ফোন করেছিল। ওর বড়ছেলে নাকি আমেরিকা থেকে বাতের সেঁক দেবার কী এক মেশিন এনেছে। কাকার কাজে লাগছে না। পিসিকে তাই দান করবে সে'টা। নিয়ে আসতে হবে। 
ভোটের ফল বেরুচ্ছে একে একে। কলকাতাময় গণতন্ত্রের সুগন্ধমাখা মোচ্ছব। মেট্রোয় ঢোকবার মুখে খুব আবীর মাখানো হচ্ছে। বাধ্যতামূলক। আবীর না মাখলে মেট্রোয় চড়া যাবে না। সেই সুবাদেই ওই দলভুক্তি হল আমার। মেট্রো বলেই টাইমটা অত নিঁখুত বলা গেল। এখন যে কেউ দেখলেই চিনবে আমি কোন দলের। যদিও আমি ভোটারই নই কলকাতার।
সিট ফাঁকা ছিল। তবু কোথাও বসতে সাহস পেলাম না। কায়দার টপ পরা ঝাক্কাস একটা ছিপলি মোবাইলে স্পাইডারম্যান খেলতে খেলতে খুব সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছিল। প্রবল ইচ্ছে হচ্ছিল পাশে বসতে। ইচ্ছেটা কড়া হাতে দমন করলুম। সবাই তো রবীন্দ্রনাথ পড়েনি… আজ সবার রঙে রঙ মেলাতে হবে। সাদা ধুতি পাঞ্জাবীর একা বোকা শুঁটকো বুড়ো সিঁটিয়ে বসেছিল সিনিয়র সিটিজেন সিটে… পাছে রঙ উড়ে পড়ে। অন্য সবাইও বেশ সমীহ করে দেখছিল… যেন ভিআইপি কেউ ভুল করে হন্ডা সিটির বদলে মেট্রোয় উঠে পড়েছে। শুধু মান্তুর বয়সী কী আর একটু ছোট একটা বাচ্চা মায়ের আঁচল টেনে বলল,
-মা… মা, ভূত উঠেছে, দ্যাখো।
হাসতে ইচ্ছে হলেও হাসলাম না। রঙের বন্যায় শুধু সাদা দাঁত দেখা যাবে। ব্যাপারটা আরও ভৌতিক হয়ে উঠবে।
নদুকাকার বাড়িতে কোনও দিনই তেমন অভ্যর্থনা পাইনি। আজও পেলাম না। নদুকাকার ভোট কাটা গেছে লিস্ট থেকে। তার ওপর বাকিরা ভোটের সকালে না কি ভোট দিতে গিয়ে শুনেছে ভোট হয়ে গেছে। কাজেই বিপক্ষ দলের রঙ মাখা আমাকে খেদিয়ে দেয়নি, নেহাৎ একই গুষ্ঠির বলে। কাকার বড় ছেলে গৌড়দা কেমন চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-এও দেখি উন্নয়নের খাতায় নাম লিকিয়ে ফেলেচে। 
শ্…শালা জ্ঞাতি শত্রু আর কাকে বলে?
কোনওরকমে সেঁক মেশিনটা বগলদাবা করে ফিরলাম … ওই মেট্রোতেই। নেমে দেখি বাইরেটা কেমন শুনশান। আবীরমাখা ফুটপাথটা ভ্যাবলার মত আমার দিকে তাকিয়ে। 
গুটি গুটি বাড়ি ফিরছি। হঠাৎ পাশে ঘ্যাঁচ করে একটা পুলিশের গাড়ি এসে থামল। গাঁট্টাগোট্টা একটা কনস্টেবল নাকি অফিসার, কলার ধরে হিঁচড়ে আমাকে ভ্যানে তুলল। সেখানে দেখি আমার মত আবীরমাখা আরও গোটা কতক। তার মাঝে মোড়ের ইস্ত্রিওয়ালা রাজুও। মুখ চেনা। আমাকে দেখে একগাল হাসল।
বলল,
-ঘাবড়িও না রবিন। নিজেদের মধ্যে শুরু হয়েছে। পেটো চালাচালি হচ্ছে। 
- কিন্তু আমাকে কেন? আমিতো ইচ্ছে করে রঙ…
থামিয়ে দিল রাজু,
-গোদাগুলোকে ধরার পারমিশন নেই। কেস দিতে হবে বলে আমাদের তুলেছে। ওই আমরা যারা ওদের মত একই রঙমাখা, কিন্তু আসলি হিরো নই, তাদেরকে।
থানা এসে গেছে। অফিসারটা মোবাইলে কার সাথে যেন চেঁচিয়ে কথা বলছিল। শেষটা শুনতে পেলাম।
-ঠিক আছে স্যার। হেড কোয়ার্টার যখন বলেছে এই রঙের আবীর মাখা সবাইকেই ছেড়ে দিতে… দিচ্ছি ।
ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ করে ভ্যানের দরজা খুলল।
-যা, ভাগ শালা… শুওরের বাচ্চারা।
আমরা… মানে যারা একই সাথে পুলিশ বাবুর শালা আবার শুওরেরও বাচ্চা…দুদ্দাড় দৌড়লাম থানার চত্ব্রর ছেড়ে। আমার বগলে পিসির বাতের মেশিন।

ফেসবুকে কমেন্ট দিন

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks