Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

যো ডর গ্যায়া সমঝো মর গ্যায়া ~ সুশোভন পাত্র

কিংসমিড,ডারবান, ২০০৭। স্টুয়ার্ট ব্রডের ওভারের প্রথম বলটা, ওয়াইড লং অন বাউন্ডারির উপর দিয়ে উড়ে গেছে গ্যালারির পিছনে। দ্বিতীয় বলে, কব্জি মোচড়ানো ফ্লিকটা আছড়ে পড়ল ডিপ স্কয়ার লেগের গা ঘেঁষা বিল্ডিং'র কার্নিশে। ক্যামেরার লেন্স তখন জুম করেছে অনুতপ্ত ফ্লিনটফের মুখ। তৃতীয় বলের পর সাইড চেঞ্জ। এবার রাউন্ড দা উইকেট। আর এবার, ডিপ এক্সট্রা কভার। চতুর্থ বলের পর শর্ট মিড উইকেট থেকে দৌড়ে এসে বোলার কে পরামর্শ দিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন কলিংউড। অতঃপর ফিল্ডিং চেঞ্জ। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলের আগে একে একে বলার কে সাহস দিয়ে গেলেন লিউক রাইট, পিটারসেনরা। কিন্তু কোন কিছুই সেদিন রাজসিক যুবরাজ কে ক্রিকেটের ক্যানভাসে ধ্রুপদী রূপকথার ছবি আঁকা থেকে আটকাতে পারেনি। এক মহাপুরুষ বলেছিলেন, "তুমি যাহা চিন্তা করিবে, তাহাই হইয়া যাইবে। যদি তুমি নিজেকে দুর্বল ভাবো, তবে দুর্বল হইবে; তেজস্বী ভাবিলে তেজস্বী হইবে।" ভারতবর্ষের বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে এই 'ভাববাদের প্রাসঙ্গিকতা প্রশ্নাতীত না হলেও অনেক সময়ই ক্রিকেট কেবলই 'মনস্তাত্ত্বিক'। আপনি যেখানে চাইবেন বোলার ঠিক সে-খা-নে-ই বল করবে। নাহলে ইংলিশ বা হাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান, ক্রিস ব্রডের, এই ছেলে, যে এখন ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মেরুদণ্ড, টি২০ ক্যাপ্টেন, সে কিনা  ছ-খানা বলই নিয়ম করে হয় হাফভলি না হয় ফুলটসে সাজিয়ে দিলেন। আরে টি-২০ ক্রিকেটের স্লগ ওভারে বল করতে যাওয়ার আগে, আমাদের পাড়ার গাবলু অবধি আপনাকে পই পই করে বলবে "আর যাই কর বাছা, ফুলটস আর হাফভলিটা দিস না"। আসলে নার্ভাসনেস দাদা, নার্ভাসনেস। এটাই হল অন ফিল্ড নার্ভাসনেস। গব্বর সিং বেঁচে থাকলে বলতেন "যো ডর গ্যায়া সমঝো মর গ্যায়া।" তখন আপনি যতই ভাবুন ইয়র্কার দেবেন ঠিক দেখবেন ফুলটস পড়ে গেছে। যতই ভাবুন বাউন্সার দেবেন দেখবেন হাফভলি পড়ে গেছে। আর যতই ভাবুন সিপিএম কে বাঁশ দেবেন দেখবেন, মুকুল উল্টো গাইছে, ম্যাডাম ক্ষমা চাইছেন, বৌ-বাজারের মোড়ে স্লিপ ও টাং'এ ভাইদের পথে বসিয়ে বলছেন "আগে জানলে টিকিটই দিতাম না"
তা ম্যাডাম, লজ্জার মাথা খেয়ে, না হয় ধরেই নিলাম যে আপনি আগে কিছুই জানতেন না। কিচ্ছুটি না। আপনি একেবারে শিশুর মত নিষ্পাপ। ফুলের মত কোমল। তা এবার তো জানেন? না হয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণাই হয়ে গেছে, কিন্তু ডিয়ার 'অগ্নিকন্যা' ওরফে 'সততার প্রতীক' ওরফে 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়', আপনি যদি সত্যি কাউকে প্রার্থী হিসাবে নাই চান, তাঁদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে খড়গহস্তই হন, তা হলে তো শুভেন্দু বাবুর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের এখনও তো সময় আছে। হোক প্রত্যাহার। গোটা রাজ্য বয়ে বেড়িয়ে, হেলিকপ্টার হাঁকিয়ে, আপনিই তো বলে বেড়াচ্ছেন, ২২০'র বেশি আসন সহ জয় নাকি নিশ্চিত। তা আপনার তো দয়ার শরীর ম্যাডাম, দিন না ছেড়ে ঐ গোটা পাঁচ-সাতটা সিট। সমুদ্র থেকে দু-বালতি জল তুলে নিলে আর কিই বা যায় আসে বলুন। আপনার সম্মানও বাঁচবে। সততা পারদও চড়চড় করে ঊর্ধ্বগামী হবে। আর একান্তই যদি এসব কিছুই করা না যায়, তাহলে তোয়ালা খ্যাত শ্রী শোভন বাবু কে দিন তো মেয়র পদ থেকে সরিয়ে। করুন স্থাপন একটা জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। আরে বাবা কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের তো নিশ্চয় আর প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। তাই না?
ইংল্যান্ড তখন ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-২০'র আঁতুড় ঘর পেরিয়ে এসেছে। সে ম্যাচে কিছু টি-২০ স্পেশালিষ্ট নামিয়েছিল। কি হাবভাব তাঁদের। কি সব ভয়ঙ্কর নাম। ড্যারেন ম্যাডি, দিমিত্রি ম্যাসকেরেনাস। বলছে, কেউ নাকি ছয় মারার স্পেশালিষ্ট তো কেউ  ইনসুইং'র। ঠিক যেন অনুব্রত আর আরাবুল। কেউ গুড় বাতাসা, কেউ চড়াম-চড়াম। কিন্তু দুঃখ হল, এতো কিছুর পর দিদি এখন আমাদের নার্ভাস স্টুয়ার্ট ব্রড। প্রথম তিন দফার পরই লুস বল দিতে শুরু করেছেন। বুদ্ধিজীবীরা নির্বাচন কমিশনে দৌড়ে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। ক্যাপ্টেন এসে পিঠ চাপড়ে সাহস দিচ্ছেন। দিদি সাইড চেঞ্জ করছেন। রিষ্ট ব্যান্ড ঘাম মুছছেন। নতুন করে ফিল্ডিং সাজাচ্ছেন। আজ বর্ধমান তো কাল এন্টালি দৌড়চ্ছেন। কিন্তু যেই রান আপ শেষে বল করছেন, সেই হয় হাফভলি না হয় ফুল্টস। ছ দফা ওভারে এবার একটা নো বল'ও হবে। আর নো বলে তো আবার ফ্রি হিট। দিন ফ্রি হিটে স্টেপ আউট করে ।বাপি এবার বাড়ি যা...

ফেসবুকে কমেন্ট দিন

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks