Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

সোমরা মারান্ডী সরকার হোসেইন ~ দেবযানী ভট্টাচার্য্য

​বাবার নাম - দেলওয়ার হোসেইন।
মায়ের নাম - রুপা সরকার
ছেলের নাম - সোমরা মারান্ডী সরকার হোসেইন
চমকে গেলেন? আমিও গিয়েছিলাম। ছেলেটি এসেছিল মায়ের সাথে। আমার কাছে ইংরাজী পড়বে। আমার বাবা যে ইশকুলে চাকুরী করতেন সেই ইশকুলে পড়ে, ক্লাস নাইন। ওখানকার একজন স্যর পাঠিয়েছেন। ভালো কথা। মায়ের চেহারার সাথে ছেলের চেহারার ভীষন তফাত। ভাবলাম হয়তবা বাপের চেহারা পেয়েছে। নাম জানতে চাইলাম। এবং বিষম খেলাম শুনে। একে অমন নাম তার উপর মায়ের কপালে সিন্দুর হাতে নোয়া, কি কান্ড! ভদ্রমহিলা আমার হতভম্ব চেহারা দেখে বুঝে নিলেন যে আমায় বিষয়টা বোঝানো প্রয়োজন। ছেলে কে কলম কেনার ছুতোয় দোকানে পাঠিয়ে বললেন সব। নিজেরা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। অনেক ঝড় সামলে নিজের নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস অক্ষুন্ন রেখেই আজ সংসার করছেন বাইশ বছর। ছেলেটি কুড়িয়ে পাওয়া। ইঁট ভাটার পাশেই ঘর। এক শিবরাত্রির সন্ধ্যেবেলায় মন্দির থেকে বাবার মাথায় জল ঢেলে ফিরে ছেঁচতলায় পড়ে থাকতে দেখেন সদ্যোজাত শিশুটিকে। পিপড়ে ছেঁকে ধরেছে। ছুটে গিয়ে কোলে নেন। আজ অবধি কোল জুড়ে। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলেন ভাটায় কাজ করতে আসা আদিবাসী এক মেয়ের উপর ঠিকাদারের সেই বিশেষ মহতী অনুভুতির ফলাফল এই অবাঞ্ছিত প্রাণ। একে নিয়ে দেশে ফেরার উপায় নেই মেয়েটির। তার মরদ জানলে মা বাচ্চা দুজন কেই জ্যান্ত কবর দেবে। সবটা বুঝে ছেলেটিকে নিজেদের কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা। শুধু জেনে নিয়েছিলেন নিজের বুকে রাখতে পারলে মেয়েটি কি নাম দিত তার সন্তানের। সেই নামই রেখেছেন। সাথে জুড়ে গেছে নিজেদের পরিচয়। পুরো গল্প বলে এক চোখ পরিতৃপ্তি নিয়ে ভদ্রমহিলা কি বলে উঠলেন জানেন? "দিদিমনি, ও আমার ভোলানাথ। শিবরাত্তিরে আমার ঘরে এসেছে ও। ওকে বুকে করে রাখব চিরকাল। ওর বাবাও ওকে চোখে হারায় জানেন। ভ্যান টেনে সন্ধ্যেবেলা ঘরে ফিরে ছেলে পাশে নিয়ে পড়তে বসায়, নিজে নামাজ পড়ে। ছেলেও বাপের দেখাদেখি নামাজে বসতে চায়। উনি দেননা। বলেন , তুই তো তোর জন্ম কথা সব জানিস বাপ আমার, আদিবাসী দের ধর্ম টাই তো আসলে তোর সেই মায়ের ধর্ম কিন্তু আমরা সেটা তত জানিনে, তাই তোর ধর্ম এখন কেবল পড়াশোনা বাপ, বড় হয়ে নে তারপর পুজো নামাজ যেটা ভালো লাগে করবি, চাইলে দুটোই করবিখন। আবার কিছু না ইচ্ছে করে করবিনা। আমি রা কাড়ব না। কিন্তু লেখাপড়া না করলে পিঠে চ্যালাকাঠ ভাংগব। বলেই ছেলে জড়িয়ে সোহাগ করেন। উনি নাকি মারবেন! তালেই হয়েছে আর কি! দিদিমনি, আপনিই মেরে বকে পড়া আদায় করে নেবেনখন। আপনাকেই ভরসা করে দিয়ে গেলাম।" চলে গেলেন উনি। আসলে আমিই ভরসা পেলাম। বিরাট এক ভরসা। মানুষ জাতটা এখন পুরোপুরি পচে নি। মালাউন মা আর মোস্লা বাপের ঘরে একান্ত আদরে মানুষ তৈরী হচ্ছে এই ভুমিখন্ডের আদিপুত্রের বংশজ। আলি সাহেব, এটাই আপনার ভারতবর্ষ।

ফেসবুকে কমেন্ট দিন

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks