Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

আবেশ কেন মারা গেলো? ~ উৎসব গুহ ঠাকুরতা

আবেশ কেন মারা গেলো? - এই জ্বলন্ত প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে গোটা বঙ্গসমাজ। আবেশের মৃত্যুতে সামগ্রিক বাঙ্গালী জাতির চেতনা জাগ্রত হয়েছে - সামাজিক কাঠামোর প্রতিটি ইঞ্চি বিশ্লেষণ করে নাগরিক সমাজ একের পর এক বৈপ্লবিক দলিল পেশ করছে। আমরা নিজেদের চিনছি, জানছি - আবেশ কেন মারা গেলো, আর কি কি করলে আবেশ মারা যেতো না। আসুন, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হওয়া সমস্ত দলিল কে এক করে আমরা একটা কারনের লিস্ট বানাই।

আবেশ মারা গেছে কারন সে আইনত প্রাপ্তবয়স্কের তকমা পাওয়ার আগেই নেশা করতো। দু মিনিট নীরবতা সেই সমস্ত পাষন্ড অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে যারা গত ৪০ বছর ধরে স্কুলে পড়াকালীন লুকিয়ে সিগারেট টেনেছে, পুজোয় বাড়ির থেকে পাওয়া পয়সা জড়ো করে মদ খেয়ে মাতাল হয়েছে, গাঁজা টেনে রাস্তায় পড়ে থেকেছে। কলেজের হোস্টেলে, বাড়ির ছাদে, বন্ধুরা এক হয়ে যারা 'নেশাভাঙ' করেছে, খুন হওয়াই যে তাদের ভবিতব্য, তা আবেশ চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে গেলো।

আবেশ মারা গেছে কারন সে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়তো, টিউশন কামাই করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতো, এবং তার কাছে মোবাইল ফোন ছিলো। দুমিনিট নীরবতা গোটা রাজ্যের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়া সেই সমস্ত অভাগাদের জন্যে, যারা টিউশন কামাই করেছে, টিউশনের স্যারের টাকা মেরে তাই দিয়ে 'নষ্টামো' করেছে। দু মিনিট নীরবতা সেই সমস্ত বাবা-মায়ের জন্যে, যারা প্রযুক্তির বিস্তার কে অস্বীকার করবার সাহস দেখাতে পারেনি, যারা বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছে (বাড়িতে কেবেল টিভি লাগাচ্ছে, পার্সোনাল কম্পিউটার কিনে দিচ্ছে, আমাদের সময় এসব ছিলো নাকি!?) , যারা সন্তানের সঠিক বিকাশের জন্যে প্রাক-ডিজিটাল বিপ্লব পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি।

আবেশ মারা গেছে কারন তার বান্ধবীদের সাথে 'খোলামেলা' মেলামেশা ছিলো, তাদের সাথে রাতে অন্তর্জালে চ্যাট করতো, আড্ডা মারতো, সামাজিক নজরদারির অভাবের কারনে তাকে এই কর্মকান্ডের থেকে বিরত রাখা যায়েনি। দু মিনিট নীরবতা বাংলার নাগরিক সমাজের জন্যে, যারা নারী-পুরুষের খোলামেলা মেলামেশায় কোনরকম বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি, যারা বাংলার পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে, উত্তর ভারতের মতন খাপের কাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। দু মিনিট নীরবতা সেই সমস্ত আধুনিকতার পাঠ পড়া নাগরিকদের জন্যে যারা এই ক্ষেত্রে ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে - পাড়ার রাস্তা দিয়ে হাতে হাত ধরে যখন স্কুল ইউনিফর্ম পড়া ছেলে আর মেয়েটা হেঁটে গেছে, তখন সমাজের যে মাথারা সেই নিয়ে প্রতিবাদ করেছে, তাদের খেঁকুড়ে বুড়ো এবং কালচার কাকু -কাকিমা বলে সন্মোধন করেছে।

আবেশ মারা গেছে কারন তার জগতে ঠাকুমার ঝুলি ছিলো না, ছিলো কানে হেডফোন আর হাতে টাকা। দু মিনিট নীরবতা সেই সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এবং তাদের সন্তানদের জন্যে যারা মনে করেছে যে সাহিত্যগুনহীন ঠাকুমার ঝুলি না পড়লেও বড় হয়ে ওঠা যায়, যারা বাছবিচার না করে নিজেদের পছন্দমতন গানবাজনা শুনতে অভ্যস্ত।

একটি বিষয় এখনও ঐক্যমত পাওয়া যায়েনি - পাড়ার সাম্যবাদী কাকু বলছেন যে আবেশ মারা গেছে কারন সমাজ এখন ভোগবাদ আর পণ্যায়নে আক্রান্ত, আর টিভিতে সনাতনী দাদু বলছেন যে আবেশ মারা গেছে কারন আমরা পরিচ্ছন সনাতনী ভারতীয় সংস্কৃতি ভুলে পাশ্চাত্যের চাকচিক্যে মেতে উঠেছি। দুজনেই অবশ্য জানিয়েছেন যে সময়ের চাকা কে ৩০ বছর পেছনে ঘোরালেই সেই আদর্শ সমাজব্যাবস্থায় পৌছানো যাবে।

আগামী দিনে আমরা আরও বেশি করে সমাজসংস্কারমূলক ভাবনাচিন্তা আশা করছি বাংলার নাগরিকদের পক্ষ থেকে। সত্য এবং পূন্যের সন্ধানে আমাদের যাত্রা চলবে। সামাজিক আন্দোলনের এই সন্ধিক্ষনের চরম মূহুর্তের  মাঝেই কিছু খুচরো মাতাল এবং পাগল যদিও বেসুরো গাইছে। ব্যাটারা বলছে চা শ্রমিকদের মৃত্যুর কারন খুজবে না? চাষী কেন আত্মহত্যা করছে তার কারন খুজবে না? আম চুরির অপরাধে গ্রামের ওই কিশোরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেললো কেন তার কারন খুজবে না? হাজার হাজার বছর ধরে আমরা একে অপরকে হত্যা করছি, ধর্ষন করছি, ১ মাসের শিশুকে রেহাই দিচ্ছি না, আস্ত জনজাতি কে হাপিস করে দিচ্ছি, তার কারন খুজবে না? আরেকজন বলছে হিটলার সিগারেট, মদ, মাংস কিছু না খেয়েই ৬০ লাখ ইহুদিকে সাফা করে দিলো, মোদী তো ছোটবেলা থেকে শাখায় আদর্শ ভারতীয় সংস্কৃতি শিখে বড় হয়েছে, না খায় মদ, না করে নেশা, না করে পার্টি, না দেয় বান্ধবীদের সাথে আড্ডা, হেডফোন লাগিয়ে রক, হিপ-হপ এসব তো নৈব নৈব চ, তার তত্ত্বাবধানে শিশুর গলায় পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো, ব্যাপারটা কিরকম গোলমেলে ঠেকছে না?

কিন্তু এসব প্রলাপে আমরা কান দিচ্ছি না। আবেশ মারা গেছে, আপাতত এই ওয়াটারশেড ইভেন্ট কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে চলেছে বাঙ্গালীর দ্বিতীয় নবজাগরন।
এই ঐতিহাসিক স্রোতের বিপক্ষে যারা চলবার চেষ্টা করবে, তারা উড়ে যাবে।

ফরোওয়ার্ড মার্চ!

ফেসবুকে কমেন্ট দিন

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks