Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

বিজ্ঞাপণের মোড়কে ঢাকা রেল পরিষেবা... আসলে রেলের যাত্রী পরিষেবার করুণ কাহিনী ~ জ্যোতির্ময়

সময়টাই এখন বিজ্ঞাপনের , সব কিছু হাজির হচ্ছে দারুণ মোড়কে। ভিতরের জিনিসটা কি রকম তার কথা নয় আসল কথা হল মোড়কটা কি রকম। সেটা কত চকচকে তাই দিয়ে জিনিসের মান ঠিক হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় রেল ব্যবস্থা , তাও যে একটা বিজ্ঞাপনের সামগ্রী তা জানা ছিল না। চারদিকে যে ভাবে নতুন রেলমন্ত্রীর ঢাক বাজানো হচ্ছে তাতে বোঝার উপায় নেই রেলের যাত্রী পরিষেবার হাল কি।

রেলকে বেসরকারী করার গল্প আজ থাক, সে হবে আরেক দিন।

যবে থেকে দিদি মন্ত্রী হয়েছেন তবে থেকে শোনা যাচ্ছে আজ মহিলা রেলগাড়ী তো কাল নতুন গাড়ী পরশু নতুন লাইন , আর উদ্বোধন হচ্ছে রোজ কিছু না কিছু । মেট্রোরেল তো দু মাসে হয়ে গেল, এতদিনে হয় নি। নাই বা সব স্টেশানে টিকিটের গেট বসল, নাই বা নতুন রেক এলো, নাই বা নতুন কর্মী নিয়োগ হলো মেট্রো দুই মাসে চালু করা দিদি ছাড়া সম্ভব ছিল কারুর। আমার বাড়ির সামনে দিয়ে মেট্রো যাচ্ছে কি আনন্দ, আহা সত্যি কি আনন্দ । লোকসভা ভোটের আগে থেকে মেট্রো চলছিল পরীক্ষামূলক ভাবে, স্টেশান তৈরি ছিল তাতে কি দিদি না হলে দুই মাসে মেট্রো চালু হতো ? ছবি তোলার নেশাতে আমার সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে লোকসভা ভোটের ঠিক পরে ২৪ মে ২০০৯ কুঁদঘাট থুঁড়ি নেতাজী স্টেশানে উঠেছিলাম সিড়ি দিয়ে , আমার ছেলে বলল বাবা বসার সিট গুলো কোথায়? ওর চোখে তখন কুঁদঘাট স্টেশানে শুধু সিট লাগানো বাকি। আর বাকি ছিল চলমান সিড়ি গুলো চালু করা। তাতে কি দিদি না রেলমন্ত্রী হলে দুমাসে মেট্রো চালু হতো কি ? আর স্টেশানের এই রকম নামকরণ দিদি ছাড়া কারুর মাথা থেকে আসবে ? এতদিন ধরে রেল স্টেশানের নামকরণ হচ্ছে কেউ পেরেছে ইতিহাস আর ভূগোল কে গুলিয়ে দিতে ? দিদি সব পারে। জয়দেব বসু আপনি যদি মেট্রো করে টালিগজ্ঞে যেতে একটা উত্তমকুমার দিন বলতে না পারেন তাতে কি, আপনি সি পি এম তাই এসব বুঝবেন না , রাজ্যপাল পারলেন আর আপনি কিনা পারবেন না যতসব।


আর উদ্বোধন এর ঘটা দেখেছেন, একে বলে চাঁদের হাট সমস্ত সুশীল এক মঞ্চে হাজির আর রাজ্যপাল, সঙ্গে মদন অরুপ পার্থের ডাকে হাজার হাজার তৃণমূলী ভাই পতাকা নিয়ে। তবে না তৃণমূলের রেলমন্ত্রী ভারতের নয় তো । সরকারী অনুষ্ঠান না তৃণমূলের মিটিং বোঝার দরকার কি ? স্বাধীনতা দিবসে রেল স্টেশানে তৃণমূলের পতাকা তোলা হতে পারে আর সরকারী অনুষ্ঠানে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে দিদির ভাইয়েরা থাকতে পারে না ? মাঝখান থেকে রাজ্যসরকার এর মন্ত্রী নেই এই সব সি পি এম মার্কা প্রশ্ন তুলে রসভঙ্গ করার কোন মানে হয়। রাজ্যসরকার না হয় মেট্রোরেলের সম্প্রসারণের ৩৩ শতাংশ টাকা দিয়েছে তাতে কি , তা বলে ওরা কেন উদ্বোধনে আসবে। আর উদ্বোধনের টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন করে লাভ কি ওটা ভারতের জনগণ নামক গৌরী সেনের টাকা ওটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই।


যাক ধান ভাঙতে শিবের গীত অনেক হলো। এবার বলি পূজোর সময় বাগ একস্প্রেস করে হাওড়া থেকে কাঠগুদাম অবধি যাওয়ার কথা , আর উপাসনা করে বেরিলি থেকে হাওড়া ফেরার কথা। রির্জাভ কামরা কথাটা বোধহয় একটা ঠাট্টা , আপনি যদি রির্জাভেশান করে যান সেটা আপনার ব্যাপার। ওয়েটিং লিষ্ট এ নাম থাকলেও আপনি কামরা তে যাবেন, সাধারণ টিকিট কেটে ফাইন দিয়ে বা টি টি'র পকেটা কিছু গুজে দিয়ে আপনি সহজেই যেতে পারেন । ঘুষ দেওয়ার কথা যদি বাদ দি তা হলে ফাইন দিয়ে আর ওয়েটিং লিষ্টে নাম থাকলে আইন সিদ্ধ ভাবে আপনি যেতে পারবেন। বসবেন কোথায় , শোবেন কোথায় সেটা আপনার ব্যাপার , আপনার দল ভারী হলে আপনি গেট বন্ধ করে , একদিকের বাথরুম বন্ধ করে রির্জাভেশান করে যাওয়া যাত্রীদের পিন্ডি চটকে আইন সিদ্ধভাবে যেতে পারবেন।


এতটা উন্নত পরিষেবা ভাবা যায় না। উপসনা তে করে বেরিলি থেকে ফেরার সময় টি টি কে ধরে নিজেদের রির্জাভ করা সিটে কোনমতে বসে এই উন্নত পরিষেবার খবর পেলাম , টি টি জানালেন সেদিন ওয়েটিং লিষ্টে যাত্রীর সংখ্যা ৫১২ জন তার মধ্যে ৪০০ জনের মত এই ভাবেই যাচ্ছেন, তবু বগি বাড়ানো হবে না , এটাই নাকি পূজোর সময় প্রতিদিনের অবস্থা। শুনে অবাক হবেন না উপসনার বগির সংখ্যা মাত্র ১০। আগের রেলমন্ত্রীর সময় বহু গাড়ী ছিল ২৫ বগির ।তাতে কি উন্নত পরিষেবা পাবেন কি করে বগি বাড়িয়ে যাত্রী সুবিধা দেখলে। আর প্রতি স্টেশানে সাধারণ যাত্রী ওঠার কথা ছেড়েই দিলাম ওটা তো পরিষেবার ফাউ ব্যাপার। আপনার মালের দায়িত্ব আপনার নিজের, রেল এর এই সব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। আর বাথরুমের কাছে করিডোর বা ভ্যেস্টিবিউওল হলো নানা মাল বহন করার জন্য। যাওয়ার সময় বাগ একস্প্রেসে এক ট্রাভেলিং এজেন্সি মাছ নিয়ে চলল দারুন সুবাস ছড়াতে ছড়াতে, তবে নানা স্টেশানে কিছু টাকা খসল তাদের পুলিশ কে সন্তুষ্ট করতে।


উন্নত পরিষেবার আরেক নমুনা হল বাথরুমের জল, অত্যাধিক যাত্রীর চাপে বা ভাঙ্গা কলের জন্য জল সব সময় থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই , বাথরুমের ভিতরে কোন হুক বা হ্যাঙ্গার পেলে আপনি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন, বাগ এক্সপ্রেসে দু রাত থাকবেন আপনি স্নান করার কথা যদি ভাবেন তা হলে দড়ি নিয়ে বাথরুমে যান আর না হলে দু দিন গরমে কাটিয়ে দিন শুভপ্রসন্ন বাবুর কথা ভেবে ,তিনি আপনার সাচ্ছন্দ দেখার জন্য রেলে চাকরী পেয়েছেন। কুপের ভিতরে সব আলো জলবে আশা করবেন না বেশির ভাগ খারাপ থাকাটাই একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার আপনার অসুবিধা হলে কি আর করা যাবে। জানালায় যদি সবকটা ছিটকিনি পেয়ে যান তা হলে আপনি সৌভাগ্যবান, না হলে সাবধানে থাকবেন আপনার হাতে জানলা পড়লে কিন্তু দিদির মত কেউ ডাক্তারী করে ট্রেনে সারিয়ে দেবে না। ( ভোটের আগে স্টার আনন্দ দেখেন নি তো দিদির ডাক্তারী তে কি ভাবে শোভনবাবু হাতে জানলা পড়েও রক্ষা পেলেন তাই জানেন না।) আসলে রেলের কোচ গুলো সব বাতিল হয়ে গেছে তাও চালানো হচ্ছে, উদ্বোধনের চোটে বাতিল কোচ দিয়ে রেল চলছে। একটু মানিয়ে তো নিতে হবে।


রেলের ক্যাটারিং বহু দিন হলো বেসরকারী হাতে, কিন্তু তার মান যে এত নেমেছে না খেলে বিশ্বাস হবে না, দিদির জনতা মিল নামক গাল ভরা নামের পুরি সবজির থেকে স্টেশানের বানানো পুরি সবজি সস্তা আর টাটকা, কিন্তু সে তো ট্রেন যদি স্টেশানে থামে তবে। উপসনার মত ১৬ টা স্টপেজের ট্রেন যদি হয় আপনার ট্রেনের রেল অনুমোদিত বেসরকারী ক্যাটারিং এর উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় কি। আর তার খাবারের মান ! মুখে না দিলে বোঝান সম্ভব নয় কি ভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে এই বেসরকারী রেল অনুমোদিত ক্যাটারিং সংস্থা।


আসলে পশ্চিমবঙ্গের এই রেলমন্ত্রীর বিজ্ঞাপনের মোড়কে খুব কাজের লোক হিসাবে যতই গগন ফাটাক স্টার আনন্দ সি এন এন- আই বি এন চ্যানেলে ইউ পি এ সরকারের ১০০ দিনের কাজের যে মূল্যায়ন বার হয়েছে। দেশের ১০০ জন প্রবীণ অগ্রণী সাংবাদিক ও সম্পাদক রা ভোট দিয়ে এই মূল্যায়ন করেছেন তাতে রেল মন্ত্রক পেয়েছে সব থেকে কম নম্বর , মাত্র ৩৪ শতাংশ। সোজা কথায় ফেল করেছেন আমাদের রেলমন্ত্রী। কিন্তু বিজ্ঞাপনের চমকের মত মোড়কে হাজির তিনি। পরিষেবার এই করুণ হাল এই জন্যই। দিদি একটা কমিটি করেছেন , তার পোষা সুশীলবাবুদের নিয়ে। যাক রেলে আর কারুর চাকরি হোক বা না হোক ওদের তো হলো। অনেক তোষামোদ করে তবে দিদির গুডবুকে ওরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের রেল পরিষেবার কি হবে ? বিজ্ঞাপনের প্রচারে পরিষেবা হবে সে প্রশ্নের উত্তর দেবে কে ?

ফেসবুকে কমেন্ট দিন

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks