দীপা কর্মকার চতুর্থ হলেন। চোখের সামনে ইতিহাস দেখলাম।
ছোটোর থেকে শুনে এসেছি মোহনবাগানের খালি পায়ে বুট পরা সাহেবদের হারানোর গল্প। আমি মাচাদের সহ্য করতে পারিনা কিন্তু তবুও এমন কোনো বাঙালি ফুটবল প্রেমী নেই যে ছোটোবেলায় মোহনবাগানের সেই শিল্ড জেতার গল্প শুনে রোমাঞ্চিত বোধ করেনি। তারপর পড়েছি মিলখা সিংহের সারা জীবনব্যাপী লড়াইয়ের কাহিনী, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকম সাহায্য না পেয়েও তিনি কি ভাবে পৌঁছেছিলেন অলিম্পিকে চার নম্বরে। পড়েছি পিটি ঊষার কথা।
আজ চোখের সামনে দেখলাম। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে দিয়ে লাফ দিলো ভারতের বিস্মৃত একটি অঙ্গরাজ্যের মেয়ে। হ্যা, প্রদুনোভায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, আনন্দবাজারের দৌলতে অনেকেই সেটা জেনে গেছি। যখন দীপা দ্বিতীয় লাফটা দিতে যাচ্ছে, পশে স্কোর বোর্ডে পরিষ্কার দেখাচ্ছে "ডিফিকাল্টি লেভেল -৭" অর্থাৎ সর্বোচ্চ। যিনি গোল্ড জিতলেন সেই মার্কিনি বাইলস কিন্তু দুটো লাফের প্রথমটা ৬.৫ এবং দ্বিতীয়টা ৬ ডিফিকাল্টির দিয়েছিলেন। কেন দীপাকে এতো কঠিন লাফ দিতে হলো? কারণ পরিকাঠামো এবং ট্রেনিঙের অভাব, যাতে তিনি অন্যান্য সহজ ঝাঁপিগুলি ঠিক মতো অনুশীলন করতে পারেননি। নিজের সমস্তটুকু বাজি রেখে চেষ্টা করেছিলেন, তবুও হলো না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় দেখেছি ছোট্ট শহরেও রোজ বিকেলে শয়ে শয়ে ছোটো ছোটো মেয়েদের জিমন্যাসিয়ামে নিয়ে যেতে তাঁদের বাপ্ মায়েদের। ভারী ভালো লাগতো ফুলের মতো শিশুদের লাফালাফি করতে দেখে, পাস দিয়ে গেলেই দাঁড়িয়ে দেখতাম। ওই দেশের পরিকাঠামো, ট্রেনিং এবং সকলের উৎসাহের কথা ভাবলে মনে হয় দীপার চতুর্থ হওয়া মোহনবাগানের খালি পায়ে শিল্ড জেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
পার্থক্য একটাই, মোহনবাগান জিতেছিল পরাধীন ভারতে যেখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বদেশী খেলোয়াড়দের অবহেলা করাটাই স্বাভাবিক আর দীপা স্বাধীন ভারতের খেলোয়াড়, পর্যাপ্ত ট্রেনিঙের ব্যবস্থা না থাকলেও দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট বিলোনো দলের ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গোয়েল তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঠিক ব্রাজিল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, মুকেশ আম্বানি আর তাঁর স্ত্রী সরকারি টাকায় অলিম্পিক দেখছেন এম্বাসেডর হয়ে।
ও, স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।