আজকের পাগলামিটা অবশ্য সেটাকেও হার মানায়।
পাগলিটা হঠাৎ করেই বলে কিনা, নিরব চলে আয়। কই আসতে হবে? কাজী অফিস! আজ এক্ষুণি বিয়ে!
নিরব সম্পূর্ণ হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর ওই ঘোর লাগা অবস্হাতেই চকবাজারস্হ কাজী অফিস।
নীলা আগেই দাঁড়িয়ে আছে। পরনে একটা নীল শাড়ি আর কপালে একটা মাঝারি সাইজের নীল টিপ। এই সাজে ওকে পরী পরী লাগছে। ওর সাথে একটা লাগেজ। নিরব এখনও বুঝতে পারছে না কি করা উচিত।
: এই গাধা, এত দেরী! চল।
: যাব মানে?
: ভেতরে চল।
: ভেতরে কি হবে?
: তুই কি বাচ্চা নাকি! ফিডার খাস?জানিস না কি হবে?
: কিন্তু কেন?
: বাবা ছেলে দেখছে। আমার পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব না।
: ছেলে দেখছে তো সমস্যা কি? বিয়ে করবি না?
: করার জন্যেই তো এসেছি।
: মানে!
: মানে, আজ তোর বিয়ে। আয় আর কথা বাড়াস না।
: নীলা!...
: কি বলার পরে বলিস। এখন চল।
: না, এখন শোন। তোর সমস্যা কি? সবকিছুই কি স্বপ্ন মনে করিস? যে ঘুমের ঘোরে দেখলাম আর যা ইচ্ছা হল, তাই করলাম?
নীলা যেন হঠাৎই হোঁচট খেয়ে থমকে গেল।
: মানে! তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
: কি বলিস এসব নীলা! পাগল হয়েছিস?
: এভাবে বলিস না নিরব। এটা মজার সময় নয়।
নিরব চোখ তুলে চায় নীলার চোখে। ওর চোখের কালো তারা ঘিরে জল টলমল করছে। নিরব আগে খেয়াল করেনি নীলা আজ চোখে নীল কাজলের আঁক টেনেছে। ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছে নীল আকাশের বুক চুইয়ে এই বুঝি ঝরে পড়ল জমাট বাঁধা শ্রাবণঢল। তবু আজ নিরবের শক্ত না হলে চলবে না।
: শোন নীলা, তুই সবসময়ই আমার সব’চে ভাল বন্ধু।
তুই আমার রঙিন জীবনের হাজারটা মধুর স্মৃতি। তোর সাথে কাটানো প্রতিটা সময় আমার কাছে এক একটা কবিতার মত। এই পৃথিবীতে যতটা আমিতোকে জানি-বুঝি, আর কাউকেই ততটা নয়। তোর সাথে আমার প্রথম বৃষ্টিভেজা দুপুর হুডখোলা রিক্সায়। তোর সাথে আমার সারা বিকেলের পাগলামি।
এ সবই ঠিক। কিন্তু, এর মানেই তো বিয়ে নয়, ভালোবাসা নয়। আমি তোকে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু বলে জানি।
: নিরব, আমি তোকে ভালবাসি…
: নীলা, প্লীইইইজ…
আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করে নিরব। একবার আলতো ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, নীলা সেখানটাতেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নিবর চলে আসে দ্বিতীয়বার না তাকিয়ে।
জানতেও পারে না তার ফেলে আসা পথে একটা বিশাল ভিড় জমে উঠছে।
কাজী অফিস থেকে বেরিয়েই তিন্নি শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হাসে। তারপর দুজনেই সামনে এগোয়।
রাস্তার ডানপাশে উষ্কখুস্ক চুল দাঁড়িওয়ালা একজন লোক দাঁড়িয়ে সামনের রাজপথের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিন্নি শুভ্রকে ডেকে বলে, ফকিরটাকে কিছু টাকা দাও, আজ একটা শুভদিন।
শুভ্র ফকিরের দিকে পা বাড়াতেই পাশের একজন দোকানদার বাঁধা দেয়,
ভাইজান উনি ফকির না। পাঁচ বছর আগে একটা মেয়ে ওই বড় রাস্তায় গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিয়ে মারা গিয়েছিল।ঘন্টা খানিক পর ছেলেটা দৌড়ে এল।
সেই যে এল তো এলই। তখন থেকেই খালি রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মাঝে মধ্যে আনমনে কাঁদে।
আর রাত গভীর হলে একাকি বহুদূর হাঁটে। আর মাঝে মধ্যে
চিৎকার করে ডাকে, নীলা…. নীলা……
💏
💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏
💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏
💏
💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏
💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏 💏